শিরোনাম :
দাঁতমন্ডল গ্রামের ডাকাত গ্রেপ্তার ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেল স্টেশনে মহানগর এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত—— কোরআন ওয়াস সুন্নাহ মাদ্রাসার উদ্যোগে শ্রীপুরে হাফেজ ছাএদের পাগড়ী প্রদান——- নবীনগরে ধর্ষকদের ফাঁসির বিক্ষোভ মিছিল *ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পেট্রোবাংলার মধ্যে কর্পোরেট স্বাস্থ্যচুক্তি* নাসিরনগর ধরমন্ডলের ইয়াবা সম্রাট গ্রেপ্তার বদলি বাণিজ্য সহ দালালদের দৌরাত্ম আওয়ামী নেতাদের দখলে নবীনগরের স্থানীয় প্রশাসন অভিযোগ ছাত্র-জনতার। বাবার সম্পত্তি ফিরে পেতে মেয়ের সংবাদ সম্মেলন ফ্লোরেন্সে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সন্তান আমেরিকান প্রবাসী ছাত্রনেতা আরিফুর রহমানকে বাঙালি কমিউনিটির সংবর্ধনা মাদ্রাসার শিক্ষক কর্তৃক ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার ছাত্রকে বলাৎকারের অভিযোগে গ্রেপ্তার!
বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫, ০৮:৫২ অপরাহ্ন

আনসার সদস্যদের পূজার ডিউটি, তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য দিতে হচ্ছে জনপ্রতি ১২শ টাকা

প্রতিনিধির নাম / ৩২৯ বার
আপডেট : বুধবার, ৯ অক্টোবর, ২০২৪

পূজার ডিউটি: আনসার সদস্যদের কাছ থেকে প্রায় ৮ লাখ টাকা ঘুষ আদায়

মিহির দেব , ব্রাহ্মণবাড়িয়া ঃ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে শারদীয় দুর্গাপূজায় পূজা মন্ডপের আইন-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যদের কাছ থেকে প্রায় ৮ লক্ষ টাকার উৎকোচ আদায় করেছে একটি চক্র। এ চক্রের সাথে উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা, কর্মচারী ও সাধারণ আনসার সদস্যরাও জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও বিগত সংসদ ও উপজেলা নির্বাচনে তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্যও সাধারণ আনসার সদস্যদের কাছ থেকে ঘুষ আদায়ের তথ্য পাওয়া গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার ১২৮ টি পূজা মন্ডপের আইন-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনের জন্য উপজেলায় আনসারদের পিসি, এপিসি ও সদস্য (পুরুষ ও মহিলা) নিয়ে মোট ৮৩২ জন নিয়োজিত রয়েছে। এদের মধ্যে পুরুষ ও মহিলা মিলিয়ে ৬৭২ জন সাধারণ সদস্যকে পূজা মন্ডপের আইন-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার ছয় দিনের চাকুরিতে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এর অধিকাংশ সদস্যকেই তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য ১২শ টাকা করে ঘুষ দিতে হয়েছে। ঘুষ আদায়ের জন্য নাসিরনগর আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ের দল নেতা-নেত্রীদের মাধ্যমে গ্রামে গ্রামে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে প্রতিনিধি। এসব প্রতিনিধির মাধ্যমে আদায়কৃত অর্থ জমা হয়েছে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের দল নেতা-নেত্রীদের হাতে। পরে উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তার মাধ্যমে বিভিন্ন পর্যায়ে ভাগ বাটোয়ারা হয় সেই অর্থ। ঘুষ আদায়ের পাশাপাশি আনসার সদস্যদের ভুয়া তালিকা করে অর্থ আত্নসাত, ভুয়া বিল প্রণয়ন, অর্থের বিনিময়ে প্রশিক্ষণ বিহীন লোক নিয়োগ, একই ব্যক্তিকে একাধিক মন্ডপে দায়িত্ব প্রদানসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগও রয়েছে উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
পূজায় নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনে তালিকাভুক্ত আনসার সদস্য নাসিরনগর সদর ইউনিয়নের টেকানগর গ্রামের মো. আবুল বাসার বলেন, “আমরারে কইসে ১২শ কইরা টেহা দেওন লাগব, পরে আমরা দিসি ১২শ। আমি অহন দাঁতমন্ডল থাহি, এই গেরামের সবাইর থেইক্কা টেহা নিসে।
দাঁতমন্ডল গ্রামের বাসিন্দা আজহারুল ইসলাম বলেন, “আমরার গেরামের (দাঁতমন্ডল দক্ষিণপাড়া) মইধ্যে তিনডা দল আছে, প্রতিডা দলে ২৪ জন করে লোক আছে। একটা দলের দায়িত্বে সড়ক পাড়ার হোসনা, আরেকটা দলের দায়িত্বে খাঁ বাড়ির শাফাউল্লাহ। এরা লোক নিয়া দে, বিনিময়ে ১২শ কইরা টেহা নে। উত্তর গেরামেও এমন দুই-তিনডা দল আছে। আমাদের পাড়ার অনেক লোক আছে এরা টেহা না দেওয়ায় ডিউটিতে যাইতে পারে নাই, যারা টেহা দিসে এরারে ডিউটিতে নিছে। আমার ভাইদের থেইক্কাও ১২শ কইরা টেহা নিসে। আমাদের গেরাম থেইক্কা প্রায় লাখখানেক টেহা নিয়া গেসে। আমরা ইডার প্রতিবাদ জানাই।
টাকার বিনিময়ে পূজার ডিউটিতে তালিকাভুক্ত হওয়া আশরাফ উদ্দিন বলেন, “আমার কাছ থেইক্কা ১২শ টেহা নিসে ইসলিমা। আমারে কইসে ১২শ টেহা লাগব, আমি ১২শ টেহা ইলার বাড়িতে নিয়া দিয়াইসি। সবার থেইক্কা নিতাসে, অহন আমারে কইসে নিয়া দিয়া আওন লাগব ইডা, আমি নিয়া দিয়াইসি। সবাই দিতাসে অহন আমিও ৩/৪ দিন আগে ১২শ টেহা দিয়া আইসি।
ঘুষ দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় তালিকাভুক্ত হতে না পারা সেলিম মিয়া বলেন, “পূজার ডিউটির টাকা নিতে আসছিল, পরে বলসে ১২শ টাকা দিতে অইব। আমরা ১২শ টাকা দিতে রাজি অইসিনা বিধায় আমরারে ডিউটিতে নিসেনা। যেরা টাকা দিসে তারারে নেওয়া হইসে। গত নির্বাচনেও আমি ডিউটি করছিলাম, ১২শ টাকা দিয়া।
নাসিরনগর সদর ইউনিয়নের আব্দুল ওয়াসিম বলেন, “আমি সবসময় আনসারদের ডিউটিতে যাই। গতবার পূজার ডিউটির জন্য ৫শ টাকা নিছে, জাতীয় নির্বাচনে দিছি ১ হাজার। এইবার টাকার জন্য আইসা বলে ১২শ লাগবো। আমি বলছি দিনদিন টাকা বারে কেরে। টাকাও দিতাম না, ডিউটিও করতাম না। ইসলিমা কইসে এইডা অফিসে দেওন লাগে, এরে-ওরে দেওন লাগে।
গ্রাম পর্যায়ে টাকা আদায়কারীদের একজন হোসনা বেগম জানান, আমরা টেহা উডাইয়া দলনেত্রী ইসলিমা আফার কাছে দিছি। আমরা গরীব মানুষ, কাজ করে খাই। দলনেত্রী কইছে টাকা তুইল্লা দিতাম, আমি ২৬ জনের টাকা তুইল্লা ইসলিমা আফার কাছে দিছি। এরা সবার কাছ থেইক্কাই টেহা নেয়। মেলাতা গুরুফ আছে, অন্য গুরুফের ওরাও দেয়। গতবারের পূজায় ৫শ কইরা নিসিলাম। উপজেলা নির্বাচনে ১ হাজার কইরা নিসে, এমপি নির্বাচনে ১ হাজার কইরা নিসিলাম।
নাসিরনগর সদর ইউপি দলনেত্রী মোছা: ইসলিমা বেগম জানান, যাদের তালিকায় নাম দিতে পারিনি তারাই এসব বলছে। পরে, ঘুষের বিনিময়ে তালিকাভুক্তদের বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সরাসরি দেখা করতে চাইলেন।
নাসিরনগর উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান জানান, এবছর ১২৮ টি পূজা মন্ডপে আমাদের আনসাররা নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে। অভিযোগের বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, আমি এ ব্যাপারে কিছু জানিনা। আপনি কোথায় আছেন, অফিসে আসেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কমান্ড্যান্ট মো. মনিরুজ্জামান জানান, পূজার বাছাইয়ের বিষয়ে শুরুতেই তাদেরকে কঠোরভাবে বলা হয়েছে, কোনো ধরণের লেনদেন যারা করবে এর দায় দায়িত্ব সে বহন করবে। ডিজি মহোদয়ও এবিষয়ে কঠোর ভাষায় সতর্ক করেছেন। আমরা তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেব।


এ জাতীয় আরো সংবাদ